![]() |
"বোকার সংসার"
তুমার মাথার চুল কোথায় গেল!তেলাপোকা খেয়েছে!ধর!ধর!তেলা পোকা ধর!দৌড়ে যাচ্ছে ছেলেটি তেলা পোকা ধরতে।কতক্ষন দৌড় পারার পর তেলাপোকা খুজেও পেল না,ধরতেও পারলো না।পরে হঠাৎ মাথায় হাত দিয়ে দেখলো চুলতো সব রয়েছেই।সালা, আমার সালা,আমার ভাইয়ের সালা,আমার বোনের সালা,আমার বাপে....ওহহহ নাহহ।তুই আমারে বুকা বানইছর কে? এখন জরিমানা দে!নইলে তরে আরো গালি দিমু কিন্তু "কদ্দুছ"।আরে "সামসু" তুই আমার চুল ছিরবি , গালি দিয়ে !যাহহহ সালা বোকা একটা।
ছেলেটা আক্কাস আলীর ।বোকা একটা ছেলে।নাম সামছু।মাথায় এক্কেবারে বুদ্ধি নাই।অনেক সরল সোজা।যে যা বলে তাই করে।কোন কাজেই ছেলেটার যেন অলসতা নেই।কত লোকে তাকে দিয়ে যে কত কাজ করায়।ছেলেটার ছোট একটা ভাই ও একটা বোন ছিল।সে তাদেরকে খুব ভালবাসতো।কিন্তু যখন তার বয়স ২০ বছর তখন একদিন গাড়ি দুর্ঘটনায় ছেলেটার বাবাসহ দুই ভাই বোন মারা যায়।এতে ছেলেটার মাথা আর ঠিক থাকে না।এখন ছেলেটা আধা পাগল হয়ে গেছে।তার বাড়িতে এক মা রয়েছে সুধু।এখন ছেলেটার বয়স ১৭ বছর হল।এখনও সামছু মনে করে তার বাবা ও ভাই-বোন বেচে আছে।এবং সে একা একাই তাদের সাথে কথা বলে।সে মনে করে তারা তার সাথে সব সময় আছে।
সামসু এলাকার সকলের কাজ করে দেয় এতে সে কিছু অর্থও পেয়ে যায় , যা দিয়ে তার সংসার চলে।সে আপনাআপনি নিজেকে নিয়ে খেলা করে,গান করে,গুরে বেড়ায়।এভাবে দিন ভালই কাটছিল।লোকজন তার সাথে অনেক মজা করতো ।তাকে বিভিন্ন ভাবে খেপাতো।সে ভাবতো মানুষ কি বোকা নিজের কাজ ফেলে আমার কাছে আসে মজা করতে।আসুক।আসুক।আমিও তাদের কে উসকে দিমু আর মজা করমু।তাই তারা আমার কাছে আসবে।এর কম করে তার দিন যেতে থাকলো।হঠাৎ একদিন সামসু দের গ্রামে অনেক বড় ও শক্তিশালী এক ঘুর্নিঝর আসলো।সে এর ভয়াবহতার কথা জানতো না।সে ভাবলো সাধারন বাতাসের মতোই।তাই সে বাতাসে নিজেকে অন্যরকম অনুভব করতে ও মজার খেলা খেলতে ঘুর্নিঝরের কাছে গেল।সাথে সাথেই ঘুর্নিঝর তাকে সহ সবকিছু উড়িয়ে অনেক উপরে আকাশে নিয়ে গেল।
সামছু চোখ খুলতেই দেখলো সে একটি জঙ্গলে সুয়ে আছে।এর আগে কি হয়েছিল তা সে মনে করে বোজতে পারে সে দুরে কোথাও এসে পরেছে।সে এক লাফে উঠে দাড়ায়।চারপাশে দৌড়ে দেখে, কোন মানুষ নেই ,সুধু বড় বড় গাছ, আর জঙ্গল , সে বুজতে পারে সে একটি বনে চলে এসেছে।
সে অনেক খুজাখুজির পর কোন লোক না দেখে, একটি গাছের নিচে বসে থাকে।পেটে খুদাও লেগেছে।কি করবে বুজতে পারছিল না।পরে সে খাদ্যের খোজে বের হয়।যেতে যেতে বনের শেষ প্রন্তে চলে আসে, যেখানে সমুদ্র এসে মিশেছে। সমুদ্রের পাড়ে নারিকেল গাছ ছিল।সেখান থেকে কয়েকটা সুকনো নারিকেল ও ডাব পেরে নেয়।একটা ডাবের পানি খেয়ে তৃসনা মেটায়।তখন ওর মনে পরে খালেক চাচার দোকানে ডিসকোবারিতে সে দেখে ছিল বনে কিভাবে টিকতে হয়।তাই সে সমুদ্রের পারে তিনটি বড় গাছ গোল আকৃতির তার চার পাশে ডালপালা দিয়ে অনেক শক্তিশালী ও সুন্দর একটি ঘর তৈরি করে।আর বনে গুরে গুরে বিভিন্ন ফল ও সবজি সংগ্রহ করে খায় সে।সমুদ্র থেকে মাছ ধরে , কাঠি ঘষে আগুন জালিয়ে পুরে খায়।এভাবে তিন দিন কেটে যায়।তার দিন ভালই কাটছিল।তাই সে ভাবে যে সে এখানেই থেকে যাবে।তাই সে আরোও শক্তিশালী বাড়ী তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়।বাড়ি তৈরির কাঠ ও ভালো বড় পাতার খোজে বের হয়।তখন সে দেখতে পায় একটি টিনের ঘরের সকল অংশ পরে আছে।তবে সব ভেঙ্গে গেছে।সে বুজে জায় এগুলো ঐ ঘুর্নি ঝরেই এখানে এসেছে।তখন সামনেই কারো সব্দ সুনতে পায় যে বলছে পানি পানি!শব্দ সুনেই দৌড়ে ঐ দিকে যেয়ে দেখে একটি মেয়ে পানির পিপাসায় কাতরাচ্ছে।তার কাছেই ছোট একটি ডাব ছিল সেটা ভেঙ্গে পানি পান করায় তাকে।মেয়েটার বয়স ১৯ বছর হবে মনে হয়।।এরপর মেয়েটাকে নিয়ে তার আস্রয়ে যায়।মেয়েটা খুব খুদার্থ থাকায় তাকে ফলপাকুর খেতে দেয়।
কিছুক্ষন পর মেয়েটার হুস ফিরে।তোমার নাম কি? রিতা।আমি সামসু।তুমি কি আমার মতো ঝড়ে উরে এসেছো? হ্যা।সামসু আমার সাথে আমার মা ও ঐ ঝড়ে উরে এসেছো।আমি যেখানে পরে ছিলাম হয়তো সেখানে মা আছে।চল সেখানে দেখি।তারা দুজন সেখানে যায়।যেয়ে দেখে রিতার মা একটি গাছের নিচে চাপা পরেছে।সামসু চেক করে দেখে রিতার মা মারা গেছে।এরপর অনেক কষ্টে তারা তাকে গাছের নিচ থেকে বের করে।এবং কবর দেয়।এবং পরে ফিরে আসার সময় দুরে একটি গাছে অনেক ফল দেখতে পেয়ে ফল পারতে যায়।সেখানে যেয়ে দেখে একটি ছোট ছেলে ও একটি ছোট মেয়ে পরে আছে।তাদের বয়স ৪-৫ বছরের মতো হবে।তাদের কাছে যেয়ে সামছু দেখে দুজনেই বেচে আছে।এটা দেখে দ্রুত তাদের কে প্রাথমিক চিকিৎসা করে।রিতা ছিল মেডিকেল কলেজের ছাত্রী তাই অতি দ্রুতই শিশু দুটিকে সুস্থ করে ফেলে।এরপর তারা দুজনে চারি দিকে খুজে দেখে আরও কোন লোক আছে কিনা ।কতক্ষন খুজার পর কাউকে খুজে না পেয়ে তারা শিশু দুটিকে নিয়ে তাদের আস্তানায় যায়।পরের দিন দুজনে মিলে ঐ ভাঙ্গা বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় সকল জিনিস পাতি সংগ্রহ করে।এবং নিরাপদ ও সুন্দর একটি জায়গায় ঐ সকল জিনিস ব্যবহার করে ও গাছের ডালপালা দিয়ে অনেক শক্তিশালী একটি ঘর তৈরি করে।এখন তারা চার সদস্যের এক পরিবারের মতো মিলে মিশে বসবাস সুরু করে।এর পাশাপাশি তারা ঐ বনটি থেকে ফিরে আসার চেস্টা করতে থাকে , কিন্তু পারে না।তারা বুজতে পারে বনটি আসলে একটি সমুদ্রের মাঝের দীপ।আর এতো দিনে সামসু ও রিতা একে অপরকে পছন্দ করতে সুরু করে।আর একদিন তারা দুজন বিয়ে করে।রিতা ঠিক করে সামসুকে সে চালাক ও বুদ্ধিমান বানাবে, তাই সে সামসুকে শিক্ষা ও বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করতে থাকে।এভাবে এক সময় সামসু সাভাবিক মানুষের মতো হয়ে যায়।এবং তাদের ঘড়ে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়।আর ঐ শিশু দুটিও ভালই বড় হয়েছে।এখন তারা ৫ সদস্যের এক পরিবার হয়েছে।এভাবেই তাদের জীবন সুখে দুঃখে কাটতে থাকে।