যে কোন আসক্তিই একটি মানসিক রোগ। আসক্তি একজন মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এ আসক্তির কারনে অন্য কোনো মানসিক রোগ বা আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে যেতে পারে।মানুষ নানান বিষয়ে আসক্ত হতে পারে তার মধ্যে উল্যেখযোগ্য হল, জুয়া, কম্পিউটার গেম,এন্ড্রয়েড গেম, মিডিয়া বা বিভিন্ন ভিডিও, বিভিন্ন খেলা,ইনটারনেট,সোসাল নেটওয়ার্ক, পর্ন, ইত্যাদি
ক. নিজে নিজেই আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
১। নিজেকে বোজাতে হবে
কোন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমে নিজেকে বোজাতে হবে যে, এই কাজে আপনার লাভ কত টুকু এবং ক্ষতি কত টুকু।আপনি এটা ছারতে চান, তা নিজেকে ভাল করে বোজাতে হবে ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।যে কোন মূল্যে আপনি এই কাজ ছারবেন এমন প্রতিজ্ঞা করুন।নিজেকে শক্ত করুন।আপনার মনে এতটুকু জোর আনুন যে, আপনি নিশ্চিন্তে বলতে পারেন, আমি ঐ কাজ অবস্যই ছারতে পারবো।
২। নিজেকে বুজানো কেন গুরুত্বপূর্ন?
বৈজ্ঞানিক গবেশনায় দেখা গেছে, মানুষের ব্রেনের এমন ক্ষমতা আছে যে , যেকোন রুগের আমদানী বা রপতানী করতে পারে।অর্থাৎ এমন কোন রোগ বা বিষয় যা পৃথিবীতে নেই, তা মানুষ অধিক চিন্তা করতে করতে নিজের মাঝে নিয়ে আসতে পারে।আবার যেই রোগ চিকিৎসা নেই, এমন রোগ অধিক আত্ববিশ্বাস বা চিন্তার ফলে ভালো করতে পারে মস্তিষ্ক।একারনেই অনেক সময় কবিরাজ বা বেদেরা ঔষধ বিক্রির সময় বলে থাকে, বিশ্বাস করতে হবে।তা নাহলে রোগ ভাল হবে না।এখানে তারা আপনার আত্ববিশ্বাস এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে রোগটা ৫০% ব্রেনের কারনেই ভাল হয়ে যায়।আপনি হয়তো সুনে থাকবেন, অনেক কবিরাজ ল্যাংরা বা যাদের পায়ে সমস্যা হাটতে পারে না তাদেরকেও হাটিয়ে ছেড়েছে।তবে কবিরাজ চলে গেলে বা দু একদিন পর আবার আগের মতো হয়ে গেছে।এতে স্পস্ট যে পায়ের সমস্যা আসলে ভালো হয়নি।বরং আত্ববিশ্বাস ও ব্রেনের ক্ষমতা ব্যবহার করে তাকে হাটাইছে বা খাড়া করেছে।
অতএব আপনি যদি অনেক আত্ববিশ্বাস অর্জন করেন এবং নিজেকে নিশ্চিত দিতে পারেন আমি পারবো, ইনসাআল্লাহ।তবে আপনি যেকোন কাজে সফল হতে পারবেন।
৩। দৈনিক রুটিন তৈরি করুন
আপনি যখন অনেক বেশি ঐ কাজটা করতেন, তখনকার দিনের একটি রুটিন তৈরি করুন।রুটিনে ২৪ ঘন্টার প্রত্যেক মুহূর্তের কাজ ও সময় লিখুন।মানে কখন খাইতেন,কখন ঘুমাতেন, ঐ কাজটি করতেন ইত্যাদি ২৪ ঘন্টার নিখুৎ রুটিন তৈরি করুন।প্রয়োজনে প্রতি মিনিটের কাজও আলাদা করে লিখুন।যেমনঃ
১। ঘুম--৬ঘন্টা -- ১১ঃ০০ থেকে ০৫ঃ০০
২। দাঁতব্রাশ--১০ মিনিট --০৫ঃ০০ থেকে ০৫ঃ১০
৩।সকালের নাস্তা-- ৩০ মিনিট ০৫ঃ১০ থেকে ০৫ঃ৪০
এভাবে সারা দিনের রুটিন তৈরি করুন।
এবার কাজ হল ঐ পুরাতন রুটিনে কিছু পরিবর্তন করে নতুন করে সাজানো।ঐ রুটিনে দেখুন আপনার কোন কোন সময়ে ঐ কাজ করতে ইচ্ছে করে।এবং কোন কোন সময় ও কি কি কাজ আপনাকে ঐটার কথা মনে করিয়ে দেয় বা খেলার নেশা ধরায়।এই সময় টুকু খাতায় লিখুন।এবার রুটিনে এই সময়টুকুতে এমন কোন কাজ আনুন যা থেকে আপনে ইচ্ছা করলেও বের হয়ে যেতে পারবেন না।যার ফলে ঐ সময়ে কাজটি করলে আসক্তির কাজটি করতে জাওয়ার সুযোগ পাবেন না।আর একটি কথা, মানুষ যদি কোন কাজ করবো না বলে প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু কোন সময়ে তার মন যদি ঐ কাজটি করতে চায় তখন সে ঐ কাজটি করেই ফেলবে প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে যাবে।কারন ব্রেনে কোন কিছু করার জন্য বেশি প্রেশার পরলে , ব্রেনের সকল জ্ঞ্যান ঐমুহূর্তের জন্য উরে যাবে।অর্থাৎ ব্রেনে সুধু একটা বিষয়ি থাকবে আর কিছু বুজবে না।তাই সব সময় এমন ভাবে থাকতে হবে যেন কখনও মনে ঐটার কথা না আসে।আর আসক্তির কারন হয় এমন কোন জায়গা বা পরিবেশে যাওয়া যাবে না।আপনি যেই বন্ধু বা লোকদের সাথে ঐ কাজ করেন তাদের সাথে মিশবেন না বা কম মিশবেন।তাদের সাথে দেখা সাক্ষাত এমন পরিবেশে করবেন।যেন ঐ আসক্তির উপকরন ঐ কাজ করার মত পরিস্থিতি না থাকে।এই সব কিছু ও রুটিন অনুযায়ী এক মাস চলতে পারলেই ঐ কাজের আসক্তি কেটে যাবে।এটা গেল একা একা আসক্তি থেকে মক্তির উপায়।
খ. অন্যের সাহায্যে আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় উপায়
কোনো কিছুর পতি আসক্তি যখন বেড়ে যায় তখন আর চাইলেই নিজে নিজে ছাড়া সম্ভব হয় না।তাই তখন লোক নিয়োগ বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা চিকিৎসার মাধ্যমে আশক্তি ছাড়াতে হবে।কোনো কিছুতে অতি আসক্ত লোকেরা যেহেতু নিজেই বুজতে পারে না বা মানে না যে সে ঐটায় আসক্ত তাই তারা নিজেরা এটা কখনো ছারতে পারবে না।এতে তাদের যে ক্ষতি হচ্ছে সে এটাও অনুভব করতে পারবে না।তাদের সাধারন ভাবে বোজালেও তারা বুজবে না বা মানবে না।তাই এদেরকে সাধারনত বুজাবার দরকার নাই।আমিও কিছু বুজাবো না।আপনি যদি এরকম অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে থাকেন।তাহলে আমি বলবো আপনি নিজে নিজেকে বেশি বোজানোর চেষ্টা করবার দরকার নেই।আপনি সরাসরি আপনাকে এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারে এমন কার কাছে যেয়ে বিস্তারিত বলেন।এবং চাইলে এই পোস্টটি পরতে বলতে পারেন।এবং তার কাছে অতিদ্রুত চলে যান।কারন আপনার মত যে কোন সময় পরিবর্নত হয়ে যেতে পারে।আমার কথা গুলো সিরিয়াস নিবেন।কারন কথা গুলো অদ্ভূত সুনালেও এগুলো সব বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত।
অতি আসক্ত লোকদের দুই ভাবে স্বাভাবিক করা যায়।যে কোন বিষয়ে আসক্ত লোকদেরকে এই দুই ভাবে স্বাভাবিক করা সম্ভব।
১। অন্য লোকের সাহায্যে আসক্তি থেকে মুক্তি
২। ডাক্তারি চিকিৎসার মাধ্যমে আসক্তি থেকে মুক্তি
১। অন্য লোকের সাহায্যে আসক্তি থেকে মুক্তি
আসক্ত কোন লোকের ২৪ ঘন্টা কিভাবে কাটাবে ,কখন কি করবে, এই সবকিছু বলে দেওয়ার জন্য একজন লোক থাকবে।এই লোক হতে পারে আত্বীয়সজন, বন্ধুবান্ধব, পরিবারপরিজন বা অন্য কোন নিয়োগ করা লোক।এছাড়া আসক্তি থেকে মুক্তি করার প্রফেসনাল লোকও রয়েছে।একজন লোক ঠিক করার পরঃ
আপনারা নিজেরাই যেন আসক্ত লোককে স্বাভাবিক করতে পারেন, সেই নিয়ম উল্লেখ করা হলঃ
কোনো আসক্তির চিকিৎসা করা সহজ বিষয় নয়। বেশির ভাগ আসক্তরাই এটাকে কোনো সমস্যা হিসেবে মানতেই রাজি না। কেউ যদি সেটা মেনেও নেয়, তবে সেটা চিকিৎসাযোগ্য বলে মানতে নারাজ। তাই আসক্ত ব্যাক্তিকে এটা বোজাতে হবে।সে যেন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চায়, এতটুকু বুজাতে হবে।বিভিন্ন ভাবে এটার ক্ষতিকর দিক ও তার জন্য ক্ষতি হচ্ছে তা তাকে বোঝাতে হবে।
আসক্ত ব্যাক্তিকে নিয়ে তার ঐ কাজের সময়ের ২৪ ঘন্টার একটি রুটিন তৈরি করতে হবে।রুটিনে যে সময় গুলোতে তার ঐকাজের কথা মনে হয়, সেই সময়টাকে চিহ্নিত করে, সেই সময়ে আসক্ত ব্যাক্তিকে অন্য কাজে পুরোপুরি ব্যস্ত রাখতে হবে।যেন কোন ভাবেই তার ঐকাজের কথা মনে না পরে।পুরোপুরি আসক্ত কোনো মানুষকে এক বারে স্বাভাবিক করা সম্ভব না।আসক্ত ব্যক্তিকে বেশি চাপ দিলে তার মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে।এমনকি পাগল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে ।তাই ধিরে ধিরে ঐ কাজের অভ্যাস ছাড়াতে হবে।আসক্ত ব্যক্তিকে প্রকৃতির রুপে মুগ্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।এজন্য প্রকৃতির সুন্দর্যে ঘেরা বিভিন্ন বন বা পার্কে নিয়ে যেতে হবে।প্রকৃতির মাঝে সে যেন মিশে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।আসক্তি থেকে মুক্তির ১ম ধাপে , আসক্ত ব্যাক্তিকে দূরে কোথাও প্রকৃতির মাঝে ভ্রমনের উদ্যেশ্যে নিয়ে যেতে পারেন।সেখানে এক বা একাদিক সপ্তাহ থাকতে পারেন।এতে রোগী দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসতে পারে।
আসক্ত ব্যক্তিকে বোজাতে হবে যে,তুমি যেভাবে সময় বা জীবন কাটাচ্ছো এটাই জীবন না।এর বাইরেও একটা সুন্দর জীবন আছে।যেই জীবনে প্রত্যেকটা অংশ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ।জীবনের প্রকৃত সূন্দর্য ও উদ্যেশ্য কি তা চখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হবে।এই সাধারন একটা বিষয় নিয়ে জীবনকে শেষ করার কোনো মানে হয় না , তা আসক্ত ব্যাক্তিকে বোজাতে হবে।
তুমি আসক্ত হয়ে তোমার অনেক ক্ষতি করে চলেছ।এভাবে চলতে থাকলে এক সময় তুমি পাগল হয়ে যাবে।এমনি মারাও যেতে পার।তাই এখন তোমাকে আসক্তির বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম করতে হবে।সুস্থভাবে বাচার সংগ্রাম।যেই সংগ্রামে তুমাকে হাজারো বাধা অতিক্রম করতে হবে।অনেক কষ্ট করতে হবে।তবেই তুমি সুন্দর একটি জীবন ফিরে পাবে।সর্বোপুরি সে যে বিষয়ে আসক্ত হয়েছে সেটা যে মূল্যহীন , অর্থহীন তা বোজাতে হবে।এবং তাকে ঐ কাজের বিরোদ্ধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে সাহায্য করতে হবে।
আসক্ত ব্যক্তিকে পুষ্টি সমৃদ্ধ সব খাবার খেতে দিতে হবে।তাকে অবহেলা করা যাবে না।তাকে রাগ দেখানো যাবে না।সকল কাজ আপনার ইচ্ছায় সে করবে কিন্তু , সে মনে করবে তার নিজের ইচ্ছায় করেছে।অর্থাৎ তার সারা দিনের রুটিন আপনিই তৈরি করবেন।কখন কি করবে তা আপনি ঠিক করবেন।কিন্তু তাকে ধমক বা স্বাসনের কন্ঠে অর্ডার করবেন না।যেহেতু সে আসক্ত তার মাথায় স্বাভাবিক মানুষের মতো জ্ঞ্যান নেই।তাই তাকে একটি অবোজ শিশু ভেবে তাকে দিয়ে সব কিছু করাতে হবে।সে যেরকম ব্যবহারি করুক না কেন ,আপনাকে তাকে বুজিয়ে বার বার বলে কয়ে হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করে তাকে দিয়ে ঐ কাজটি করাতেই হবে।এর জন্য আপনারও অনেক ধর্যের প্রয়োজন।
তাকে কখনোই পুরোপুরি ইচ্ছা মত চলতে দেওয়া যাবে না।কোন কিছুর জেদ ধরলে তাকে বুজিয়ে জেদ ভাঙ্গাতে হবে।
একজন স্বাভাবিক মানুষের সম্মান, অর্থ, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, পেশা ইত্যাদি যে রকম সবাভাবিক থাকে , তারও যেন এসব কিছু স্বাভাবিক থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।তাকে কেও যেন কটু কথা না বলতে পারে সে দিকে নজর দিতে হবে।মানুষ জন যদি তাকে কটু কথা বলে তবে সে স্বাভাবিক জীবনকে আরো উপেক্ষা করে আরোও আসক্ত হয়ে যেতে পারে।এভাবে মাস খানেক নিয়ম মেনে চলে আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
২। ডাক্তারি চিকিৎসার মাধ্যমে আসক্তি থেকে মুক্তি
দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হাজারো ডাক্তার রয়েছে, যারা আসক্ত লোকের চিকিৎসা করে।তাই ভাল কোন ডাক্তার বা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ নিতে পারেন।এবং সঠিক চিকিৎসা করাতে পারেন।