বিয়ে একটি সামাজিক , ধর্মীয় এবং পারিবারিক বন্ধন । বিয়ের মাধ্যমে স্বামী - স্ত্রীর যৌথ প্রচেষ্টায় একটি পরিবার গড়ে ওঠে । তাঁরা দুজনে নির্দ্বিধায় মেলামেশা করতে পারে । তাদের মাঝে প্রেম - প্রীতি ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে । বিয়ের ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা মেনে চলা দরকার । মেয়েদের 20 বছর বয়সের আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উচিত নয় । বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েরা অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করে । এর ফলে গর্ভবতী মা এবং সন্তান উভয়েরই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে ।
স্বামী - স্ত্রীর দৈহিক সম্পর্কের মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণু স্ত্রী প্রজনন অঙ্গে প্রবেশ করে । শুক্রাণুতে লেজ থাকে । যা তাকে সাঁতরিয়ে স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের ভিতর প্রবেশ করতে সাহায্য করে । পরিণত শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর মিলন ঘটে স্ত্রীর ডিম্বনালিতে । এ মিলনকে নিষেক বলে । তবে জেনে রাখা প্রয়োজন , একটি শুক্রাণু দিয়ে একটিমাত্র ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় । এভাবে মানবদেহের ভিতরে অন্তঃ নিষেক ঘটে । এ বিশেষ পদ্ধতিতে শুক্রাণুর একপ্রস্থ ক্রোমোজোম ( n ) ও ডিম্বাণুর একপ্রস্থ ক্রোমোজোমের ( n ) মিলন ঘটে , ফলে দুই প্রস্থ ক্রোমোজোমের ( 2n ) সমন্বয়ে জাইগোট ( Zygote ) উৎপন্ন হয় ।
ভ্রূণের বিকাশ
নিষিক্ত ডিম্বাণু ধীরে ধীরে ডিম্বনালি বেয়ে জরায়ুর দিকে অগ্রসর হয় । এ সময় নিষিক্ত ডিম্বাণুর কোষ বিভাজন বা ক্লিভেজ ( cleavage ) চলতে থাকে । কোষ বিভাজনের শেষ পর্যায়ের গঠন্মুখ ভ্রূণ ডিম্বনালি থেকে জরায়ুতে পৌঁছায় । এ পর্যায়ে ভ্রূণকে ব্লাস্টোসিস্ট ( Blastocyst ) বলে । জরায়ুতে এর পরে যে ঘটনাবলির অবতারণা হয় , তা ভ্রূণ গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
ব্লাস্টোসিস্টের পরবর্তী পর্যায়গুলো সম্পন্ন হওয়ার জন্য ভ্রূণকে জরায়ুর প্রাচীরে সংলগ্ন হতে হয় । জরায়ুর প্রাচীরে ভ্রূণের এ সংযুক্তিকে ভ্ৰূণ সংস্থাপন ( Implantation ) বা গর্ভধারণ বলে । জরায়ুর অন্তঃগাত্রে সংলগ্ন অবস্থায় ভ্রূণটি বাড়তে থাকে এবং ধীরে ধীরে মানবশিশুতে পরিণত হয় । জরায়ুর অন্তঃগাত্রে । ভ্রূণের সংস্থাপন হওয়ার পর থেকে শিশু ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত সময়কে গর্ভাবস্থা বলে । এ সময় মাসিক । বা রজচক্র বন্ধ হয়ে যায় । সাধারণত 38-40 সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভাবস্থা বিদ্যমান থাকে ।
অমরা ( Placenta )
যে বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে মাতৃ জরায়ুতে ক্রমবর্ধমান ভ্রূণ এবং মাতৃ জরায়ু - টিস্যুর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় , তাকে অমরা বা গর্ভফুল বলে । ভূণ জরায়ুতে পৌঁছানোর 4-5 দিনের মধ্যে সংস্থাপন সম্পন্ন হয় ।
ক্রমবর্ধমানশীল ভ্রূণের কিছু কোষ এবং মাতৃ জরায়ুর অন্তঃস্তরের কিছু কোষ মিলিত হয়ে ডিম্বাকার ও রক্তনালিসমৃদ্ধ এই অমরা তৈরি করে । নিষেকের 12 সপ্তাহের মধ্যে অমরা গঠিত হয় । এভাবে ভ্রূণ এবং মাতৃ জরায়ুর অন্তঃস্তরের মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য অস্থায়ী অঙ্গ তৈরি হয় । প্রসবের সময় অমরা দেহ | থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যায় ।
অমরার সাহায্যে ভ্রূণ জরায়ুর গায়ে সংস্থাপিত হয় । ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের দরকার । শর্করা , আমিষ , স্নেহ , পানি এবং খনিজ লবণ ইত্যাদি অমরার মাধ্যমে মায়ের রক্ত থেকে ভ্রূণের রক্তে প্রবেশ করে । অমরা অনেকটা ফুসফুসের মতো কাজ করে । অমরার মাধ্যমে ভ্রূণ মায়ের রক্ত থেকে অক্সিজেন গ্রহণ এবং ভ্রূণ থেকে কার্বন ডাই - অক্সাইডের বিনিময় ঘটে । অমরা একই সাথে বৃক্কের মতো কাজ করে । বিপাকের ফলে যে বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয় তা অমরার মাধ্যমে ভ্রূণের দেহ থেকে অপসারিত হয় । অমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করে । এ হরমোন ভ্রূণের রক্ষণাবেক্ষণ ও তার স্বাভাবিক গঠনে সাহায্য করে ।
অমরাতে প্রচুর রক্তনালি থাকে । অমরা , আম্বিলিকাল কর্ড দ্বারা ভ্রূণের নাভির সাথে যুক্ত থাকে । একে নাড়িও বলা হয় । এটা মূলত একটি নালি , যার ভিতর দিয়ে মাতৃদেহের সাথে ভ্রূণের বিভিন্ন পদার্থের বিনিময় ঘটে । গর্ভাবস্থায় অমরা থেকে এমন কতগুলো হরমোন নিঃসৃত হয় , যা মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন এবং । প্রসব সহজ করতে সহায়তা করে ।
শূণ আবরণী ( Foetal membranes )
প্রত্যেক প্রজাতিতে ভ্রূণের জন্য মাতৃদেহের ভিতর সহজ , স্বাভাবিক এবং নিরাপদ পরিবর্ধনের ব্যবস্থা হিসেবে ভ্রূণের চারদিকে কতগুলো ঝিল্লি বা আবরণ থাকে । এগুলো ভ্রূণের পুষ্টি , গ্যাসীয় আদান - প্রদান বর্জ্য নিষ্কাশন ইত্যাদি কাজে সহায়তা করে । ভ্রূণ আবরণীগুলো ক্রমবর্ধনশীল ভ্রূণকে রক্ষা করে এবং অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয় ।
ভ্ৰূণ মাতৃগর্ভে গড়ে প্রায় 40 সপ্তাহ অবস্থান করে । ঐ একই সময়ে গর্ভবতী মায়ের অগ্র পিটুইটারি ও অমরা থেকে হরমোন নিঃসরণ শুরু হয় । প্রসবের পূর্বে জরায়ু নির্দিষ্ট ব্যবধানে সংকুচিত হতে থাকে এবং ব্যথা - বেদনার সৃষ্টি হয় । এই ক্রমবর্ধমান বেদনাকে প্রসববেদনা ( Labour pain ) বলে । প্রসবের শেষ পর্যায়ে ভ্রূণের বাইরের পর্দাগুলো ফেটে যায় । এর ভিতরের তরল বাইরে নির্গত হয় । এক পর্যায়ে শিশু ভূমিষ্ঠ হয় ।