মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীতে প্রায় একই পদ্ধতিতে লিঙ্গ নির্ধারণ হয় । মানবদেহে ক্রোমোজোম সংখ্যা 46 টি বা 23 জোড়া । এর মধ্যে 22 জোড়া বা 44 টিকে অটোজোম ( Autosome ) এবং 1 জোড়াকে সেক্স ক্রোমোজোম ( Sex chromosome ) বলা হয় । অটোজোমগুলো শারীরবৃত্তীয় , ভ্রূণ এবং দেহ গঠন ইত্যাদি কার্যাদিতে অংশগ্রহণ করে । লিঙ্গ নির্ধারণে এদের কোনো ভূমিকা নেই । সেক্স ক্রোমোজোম দুটি এক্স ( X ) এবং ওয়াই ( Y ) নামে পরিচিত । লিঙ্গ নির্ধারণে এরা মুখ্য ভূমিকা পালন করে ।
নারীদের ডিপ্লয়েড কোষে দুটি সেক্স ক্রোমোজোমই X ক্রোমোসোম অর্থাৎ xx , কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে দুটির মধ্যে একটি x অপরটি Y ক্রোমোজোম অর্থাৎ XY X এবং উভয় ধরনের সেক্স ক্রোমোজোমই আকৃতিতে লম্বা এবং রডের মতো , তবে Y ক্রোমোজোম X কোমোজোমের তুলনায় কিছুটা ছোট । নারীদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু তৈরি করার সময় যখন মিয়োসিস বিভাজন ঘটে , তখন প্রতিটি ডিম্বাণু অন্যান্য ক্রোমোজোমের সাথে একটি করে X ক্রোমোজোম লাভ করে । অন্যদিকে , পুরুষে শুক্রাণু সৃষ্টির সময় অর্ধেক সংখ্যক শুক্রাণু একটি করে X ক্রোমোজোম এবং অবশিষ্ট অর্ধেক শুক্রাণু একটি করে Y ক্রোমোজোম লাভ করে । ডিম্বাণু পুরুষের X বা Y বহনকারী যেকোনো একটি শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত হতে পারে । গর্ভধারণকালে কোন ধরনের শুক্রাণু মাতার x বহনকারী ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হবে তার উপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ সন্তানের লিঙ্গ । যেহেতু নিষেকে কেবল একটি শুক্রাণুই ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হয় , তাই পিতার X অথবা Y শুক্রাণুর কোনটি সাফল্যজনকভাবে নিষেক ঘটাবে , তার উপর নির্ভর করে সন্তানের লিঙ্গ । যদি x বহনকারী শুক্রাণু নিষেক ঘটায় , তাহলে জাইগোট হবে xx , অর্থাৎ সন্তান হবে কন্যা । আর যদি Y বহনকারী শুক্রাণু নিষেকে অংশগ্রহণ করে , সেক্ষেত্রে জাইগোটে x এবং Y ক্রোমোজোম থাকবে অর্থাৎ ক্রোমোজোম দুটি হবে XY । ফলে সন্তান হবে পুত্র ।
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে , অর্থাৎ কন্যা বা পুত্রসন্তানের জন্ম হওয়ার ব্যাপারে মায়ের আদৌ কোনো ভূমিকা নেই । কারণ মা সব সময় কেবল X বহনকারী ডিম্বাণু তৈরি করে । অন্যদিকে পিতা X এবং Y দুধরনেরই শুক্রাণু উৎপাদন করে লিঙ্গ নির্ধারণে ভূমিকা রেখে থাকে ।